অনেকেই আমরা বিভিন্ন কারনে ওয়েবসাইট করে থাকি। অনেকের তার নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট চাই, অনেকের নিজেকে ব্র্যান্ডিং করার জন্য, অনেকের আবার অনলাইন থেকে স্থায়ী উপার্জনের জন্য। তো যে জন্যই ওয়েবসাইট করা হয়ে থাকুক না কেন ওয়েবসাইট করতে গেলে প্রথমেই যে সমস্যাটি এই সেক্টরে নতুনদের মধ্যে হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে- ওয়েবসাইট করতে কি কি প্রয়োজন হয়, কোনটার কি কাজ, ওয়েবসাইট তৈরির পর সেটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে এই বিষয়ে না জানা অথবা ভুল ধারনা পোষণ করা। সঠিকভাবে একটি ওয়েবসাইটের বেসিক কলাকৌশল এবং টেকনিক্যাল টার্ম গুলো না জানা থাকলে সহজেই আপনি প্রতারিত হতে পারেন।
শুধুমাত্র তাদের জন্যই আজকের পোস্ট যারা হয়ত ভাবছেন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন কিন্তু কিছু বুঝছেন না কি করবেন, অথবা যারা ওয়েবডিজাইন শিখে অনলাইন থেকে আয় করতে চান কিন্তু বোঝেন না কিভাবে একটি ওয়েবসাইট কাজ করে এবং এখানে কি কি টেকনিক্যাল টার্ম রয়েছে।
প্রথমেই সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক কিছু টেকনিক্যাল টার্মঃ
১. ডোমেইন নেইমঃ ডোমেইন হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট অপরিবর্তনীয় বেসিক নাম। যেমন ধরুন আমরা ফেসবুক ভিজিট করতে চাইলে ওয়েব ব্রাউজার (যেমন- গুগল ক্রোম, মজিলা, UC ব্রাউজার ইত্যাদি)-তে গিয়ে কি লিখি?
www.facebook.com এবং এন্টার প্রেস করার সাথে সাথেই আমাদের সামনে হাজির হয় ফেসবুকএর ওয়েবসাইট। এই যে আমরা
facebook.com লিখলাম এই
facebook হচ্ছে এই ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেম। যেহেতু একটি ওয়েবসাইট পুরো পৃথিবী জুড়ে থাকে এবং যে কেউ সেটা যে কোন প্রান্ত থেকে ভিজিট করতে পারে এই জন্য একই ডোমেইন নেম কেবলমাত্র একবারই রেজিস্ট্রেশন করা যায়। যেমন ধরুন কেউ একজন
something.com নামে একটি ডোমেইন কিনে ফেলল। একবার কেউ এই নেম কিনে ফেললে এটা অন্য কেউ আর কিনতে পারবে না যতক্ষন পর্যন্ত ওই মালিক এই ডোমেইন ব্যবহার করবে।
২. ডোমেইন TLD: উপরে উদাহরনে
facebook.com ডোমেইনের শেষে যে .com কথাটি লিখা আছে সেটিই হচ্ছে এই ডোমেইন এর extension. আর একই ডোমেইন এর জন্য এই রকম বিভিন্ন এক্সটেনশন কেনা যায় যেমন- .com, .net, .org আবার একেক দেশের জন্যও নির্দিষ্ট একেক এক্সটেনশন পাওয়া যায় যেমন- বাংলাদেশের জন্য- .com.bd আবার ইন্ডিয়ার জন্য .co.in বা .in এই রকম। আর .com, .net, .org এই ধরনের কিছু এক্সটেনশন রয়েছে যেগুলো সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্টে বেশ ভাল প্রাধান্য পেয়ে থাকে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়, এগুলাকে বলা হয় Top Level Domain বা সংক্ষেপে TLD.
৩. হোস্টিংঃ যেহেতু একটি ওয়েবসাইট শুধুমাত্র একজনের জন্য নয়। এটি পৃথিবীর যে কেউ যে কোন জায়গা থেকেই দেখতে পারবে। এই জন্য আপনার ওয়েবসাইটে যে কন্টেন্ট (কন্টেন্ট হচ্ছে যে কোন ডাটা বা তথ্য,যেমন- কোন লিখা, ছবি, গান, ভিডিও যে কোন কিছু) থাকবে সেই কন্টেন্ট গুলো অবশ্যই ইন্টারনেটের সংযোগ আছে এমন কোন জায়গায় রাখতে হবে যাতে করে সেটা ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং যে কেউ সেটা যে কোন সময় দেখতে পারে।
ব্যাপারটা আরো একটু ক্লিয়ার করা যাক- ধরুন আপনি ঢাকায় থাকেন এবং আপনার কম্পিউটারে আপনার খুব সুন্দর একটা ছবি আছে। আপনি চাচ্ছেন এটা আপনার বন্ধূকে দেখাবেন কিন্তু সে থাকে আমেরিকা। এখন আপনি কি করে তাকে সেটা দেখাতে পারেন? এর জন্য হয় আপনাকে সেই ছবির ফাইলটি নিয়ে আমেরিকা যেতে হবে অথবা আপনার বন্ধুকে সেই ছবি দেখার জন্য বাংলাদেশে আপনার কম্পিউটারের সামনে আসতে হবে। কিন্তু ভাবুন তো যদি এই রকম হয়- এই ছবিটি আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন এক জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন এবং সেই জায়গার ঠিকানা আপনি আপনার বন্ধূকে মোবাইলে মেসেজ করে দিয়ে দিলেন। এখন কিন্তু ছবিটি শুধু আপনার কম্পিউটারেই নেই, এটি এখন আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন এক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং সেই ঠিকানাও আপনি আপনার বন্ধূকে দিয়েছেন। এবার কিন্তু আপনার বন্ধু চাইলে সহজেই সেই ঠিকানায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢুকে আপনার ছবিটি দেখতে পারবে। কারন সেটি এখন আপনার কম্পিউটারে নেই, বরং এটি আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন এক জায়গায় রেখেছেন বা হোস্ট করেছেন। ঠিক যে জায়গায় আপনি এই ছবির ফাইল টি রেখেছেন সেটিকেই সহজ ভাষায় বলা হয় হোস্টিং।
তার মানে, এক কথায় বলা যায়, আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় তথ্য আপনি যে জায়গায় রাখবেন যাতে করে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে সেটা দেখতে পারবে, সেটাই হচ্ছে হোস্টিং। এখানে আবার বিভিন্ন বিষয় থাকে, যেহেতু ফাইল গুলো কোন এক জায়গায় স্টোর করা হবে তাই সেখানে সিকিউরিটি অ্যাক্সেস থাকে। আবার স্পীড এর একটা ব্যাপার থাকে। এই সকল বিষয় মূলত নির্ভর করে সার্ভার এর উপর। আপনি যে ফাইল গুলো হোস্ট করছেন সেগুলো কিভাবে অন্য লোক দেখবে এবং স্পীড কেমন হবে, ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে কিনা এগুলো আপনার সার্ভার এর উপর নির্ভর করে। এগুলো নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে লিখার চেস্টা করব ইনশাআল্লাহ্।
সেই পর্ব পেতে চোখ রাখুন আমাদের সাইটে।
৪. নেমসার্ভার এবং DNS: উপরে বললাম ডোমেইন হচ্ছে ওয়েবসাইটের মেইন নাম যেটা দিয়ে মানুষ আপনার ওয়েবসাইটে ঢুকবে, আর হোস্টিং হচ্ছে কোন একটা স্পেস বা জায়গা যেখানে আপনার সাইটের যাবতীয় তথ্যগুলো সংরক্ষিত থাকবে। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে- অনলাইনে তো এমন কোটি কোটি ওয়েবসাইট আছে তাহলে কোন ওয়েবসাইটের তথ্য কোন হোস্টিং এ আছে সেটা সিস্টেম চিনবে কি করে? ধরুন, সুজনের একটি ওয়েব আছে sujon.com নামে যেখানে সুজনের ছবি এবং তার অন্যান্য তথ্য আছে, আবার মামুনের একটি ওয়েবসাইট আছে mamun.com নামে যেখানে মামুনের ছবি এবং তার অন্যান্য তথ্য আছে। এখন যদি ব্রাউজারে গিয়ে www.sujon.com লিখলে যদি মামুনের তথ্য চলে আসে তাহলে কিন্তু হবে না, এবং এমনটা হয়ও না। এর কারন কি? এর কারন হচ্ছে এই Domain Name System বা DNS. এটা এমন একটা সিস্টেম যেটাতে প্রতিটা ডোমেইন এবং হোস্টিং সঠিকভাবে কানেক্ট করার জন্য আলাদা কিছু নেমসার্ভার থাকে, যেটার মাধ্যমে সিস্টেম চিনে নেয় কার ডোমেইন কোন জায়গায় হোস্ট করা হয়েছে।
এক নজরে ডোমেইন হোস্টিং সংক্রান্ত কিছু তথ্যঃ
একটি ডোমেইন কেবল একবারই রেজিস্ট্রেশন করা যায়, মেয়াদ থাকা অবস্থায় একই ডোমেইন দ্বিতীয় কেউ রেজিস্টার করতে পারবে না, তবে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যদি মালিক রিনিউ না করে তাহলে অন্য কেউ সেটা রেজিস্ট্রেশন করতে পারে
রেজিস্ট্রেশন এর ভিত্তিতে একটি ডোমেইন এর মেয়াদ ১ বছর থাকে বা তার বেশিও থাকতে পারে
একই ডোমেইন অনেকে সস্তায় আবার অনেকে দামে বিক্রি করে, কিন্তু এদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সস্তার ডোমেইন সেলাররা প্রায়ই ডোমেইন এর কন্ট্রোল প্যানেল দেয় না, ফলে ক্রেতা প্রায়শই প্রতারিত হয় এবং অনেকে আবার সস্তায় ডোমেইন বিক্রি করে পরে অনেক টাকা দাবী করে ডোমেইন এর ইনফরমেশন আটকে রাখে। কাজেই টাকা একটু বেশি গেলেও বিশ্বস্ত কারো কাছ থেকেই ডোমেইন কেনা ভাল কেননা এটি একদিন দুইদিনের জন্য নয়, একটি ডোমেইন সারাজীবনের জন্য। উল্লেখ্য, একটি ডোমেইন এর মূল্য সাধারণত ১০-১৫ ডলার এর মত।
হোস্টিং কেনার আগে সেটার যাবতীয় ডিটেইলস জেনে নিবেন এবং সার্ভার আপটাইম কেমন থাকবে জেনে নিবেন
ডোমেইন এবং হোস্টিং দুটোই প্রতি বছর মেয়াদ শেষ হলে রিনিউ করতে হবে, এই ক্ষেত্রে নতুন করে আবার রেজিস্ট্রেশন করা লাগে না, শুধু পুনরায় আগামী ১ বছরের টাকা পরিশোধ করলেই হয়
nice information
ReplyDelete